TERRACOTTA WARRIORS , Legacy Of The First Empire Of China [ শেষ পর্ব ]

THE TERRACOTTA WARRIORS , Legacy Of The First Empire Of China

শেষ পর্ব ঘরের রাউন্ড টেবিলের উপরেরাখা মূর্তিটার উপরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো রিমঝিম, এক ঝলক দেখে নিয়ে আবার মনোযোগ দিলো ভিক্টরদার দিকে ! ঘরের মধ্যে সবাই একেবারে চুপচাপ !


ভিক্টরদা চেয়ারে হেলান দিয়ে রিলাক্স হয়ে বসলো, দুটো চোখ বন্ধ ! ঠিক যেন মন দিয়ে কিছু ভাবছে ! ভিক্টরদাকে এরকম পরিস্থিতিতে আগেও দেখেছে ওরা !এর মানেটা তাই ওদের কাছে স্পষ্ট, ভিক্টরদার মনে একটা গল্প জমাট বেঁধেছে ! তাই এখন চুপচাপ থাকাই শ্রেয়,
রিমঝিম জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো,ভিক্টরদার বাড়িটা ওদের পাড়ার একদম পূর্ব দিকের শেষ প্রান্তে ! এর পর থেকেই শুরু বিস্তৃণ সবুজ ধানক্ষেত ! যদিও পরপর তিন দিন বৃষ্টি হবার ফলে আজ মাঠে জলজমা হয়ে আছে ! দূরে ক্ষেতের মাঝে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু বসত বাড়ি, ভিক্টরদার বাড়ীর পিছনে সরু মাটির রাস্তা চলে গেছে এই মাঠের দিকে ! এই বাড়ীর ছাদ থেকে দূরে নীল আকাশ আর সবুজ মাঠের একসাথে মিশে যাবার অসাধারণ দৃশ্য তারা অনেক বার উপভোগ করেছে !

কিন্তু আজ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা অনেক অব্যাখ্যাত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায় , তার চেয়েও সীমাহীন এক কৌতূহল তাকে অস্থির করে তুলেছে ! যেমন চিনদেশের একটা অতি সাধারণ অখ্যাত একটা গ্রামের মাটির তলায় এরকম অনেক টেরাকোটা যোদ্ধা উদ্ধার হবার পিছনে রহস্যটা কি ?
কে বা কেন মাটির তলায় এই ভাবে এতো গুলো মূর্তি পুঁতে রাখবে ?
গ্রামের মানুষ মনে মনে যে ভুত-প্রেত বা জাদু টোনার কথা ভেবে ছিলো সেটাও বা কতটা সত্যি ?
আর এতো বছরের পর বছর এইসব মূর্তি গুলোর মাটির তলায় এইভাবে টিকে আছে কি ভাবে ?
একটা ব্যাপারে সে নিশ্চিত এই পুরো ঘটনার পিছনে একটা বড়ো ঐতিহাসিক কাহানি আছে, যেটার খুবই সামান্য এখন পর্যন্ত জানা গেছে ! এই সম্রাট কিন - শি -হুয়াং নিশ্চই একটা রহস্যময় চরিত্র , নাহলে ভিক্টর দা তার টেরিকটা আর্মির রিপ্লাকা কালেকশন করে কখনো !!

অদ্ভুত ব্যাতিক্রমধর্মী এক মানুষ ছিলেন এই সম্রাট শি-হুয়াং " কথাটা চোখটা বন্ধ করেই বলে উঠলো, ভিক্টর দা ! ওরা সবাই উদগ্রীব শ্রোতা হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো ! বাবার হটাৎ মৃত্যুর পরে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসার পরেই নাকি তার মৃত্যুর পরের সমাধিসৌধ তৈরী করা পরিকল্পনা করেন, এই জন্য ৭০ হাজার লোকও নিয়োগ করেন এবং তাঁদের বাধ্য করেন তার জন্য এক সুবিশাল সমাধিসৌধ তৈরী করার ! তার অদম্য বাসনা ছিলো অমরত্ব লাভের অর্থাৎ মৃত্যুর পরেও প্রজারা যেন তাকে সারাজীবন মনে রাখে !
কথিত আছে পরকালে তার ব্যবহারের জন্য এই সমাধিসৌধে নাকি বিপুল পরিমানে ধন-সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয় ! কিন্তু এই ঘটনার সাথে মাটির তলার পাওয়া মূর্তির কি সম্পর্ক ?" বোকার মতন বলে ফেললো অর্ক !
ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ভিক্টরদা, তারপরে কিছুটা উঠে সোজা হয়ে তার চেয়ারে বসলো,
আর বললো " দুটো ঘটনাই একে ওপরের সাথে সম্পর্কিত ".
তবে আগে , সে দিন মাটির তলা উঠে আসা মূর্তি গুলোর ঘটনাটা আগে শোনা যাক !
" উমম "...... ওরা সবাই একসাথে মাথা নেড়ে সাই দিলো !


TERRACOTTA WARRIORS

একটু চুপ থেকে ভিক্টরদা বলতে শুরু করলো , মাটি খুঁড়ে এই সব মূর্তি গুলো পাওয়া খবর সংবাদপত্র, টেলিভিশনে প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই সমগ্র দেশে ব্যাপক শোরগল সৃষ্টি হ লো. ফলে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্তের কৌতুহলী মানুষের আগমন ঘটতে শুরু হলো এই ছোট্ট জিয়াঙ গ্রামে ! তাঁদের সামলানো মুশকিল ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ! এদিকে দেশের শিক্ষিত বুদ্ধিমান সম্প্রদায় মানুষের দাবি এই ঘটনার সঠিক তথ্য জানাতে হবে. সরকারের টনক নড়লো, জনগণের চাপে শেষপর্যন্ত চিন সরকার এই ভু -গর্ভস্ত সেনা

বাহিনীর রহস্য সমাধান করতে উদ্যোগী হলেন ! এবারে সার্বিক ভাবে খোঁড়া-খুঁড়ির দ্বায়িত্ব দেওয়া হলো প্রফেশনাল সরকারি প্রত্নতত্ত দলের উপরে ! এবারে খোঁড়াখুঁড়ি আবিষ্কারে বিশালত্বে ও গুরুত্ব এ চমকে উঠলো পুরাতত্ত বিশ্ব !

কি , কি পাওয়া গেলো মাটির তলা থেকে ?  
উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো নিশো ! তার দিকে তাকিয়ে ভিক্টর দা বললো অনেক কিছু, মোট তিনটি বিশাল আলাদা আলাদা পিট পাওয়া গেলো, পিট মানে চেম্বার ! এই প্রতিটা চেম্বার আবার আলাদা-আলাদা লম্বা করিডরে বিভক্ত, করিডর গুলো প্রতিটা প্রায় ৩ মিটারের বেশি চওড়া ! প্রথম পিটে এরকম ১১ করিডর আছে ! এখান থেকেই অনুমান করা যাচ্ছে এই এক একটি পিট কতটা বিশাল আকৃতির ! আয়তনে প্রায় দুটো ফুটবল খেলার মাঠের সমান [ ৬৪ মি দৈঘ্য আর ২৩০ মি. প্রস্থ ]





এবারে শোন এই পিট গুলোর মধ্যে কি কি পাওয়া গেলো ! পুরাতাত্বিক সমীক্ষা বলছে এখন পর্যন্ত টোটাল ৮০০০ টি সৈন্য, ১৩০ টি রথ, ৫২০ টি ঘোড়া পাওয়া গেছে, আর এগুলো ছাড়াও এখানে আছে অনেক অন্য ধরণের মূর্তি , যেমন নৃত্যশিল্পি, সংগীতকার , পাচক , বিদূষক ইত্যাদি ! আশ্চর্য ব্যাপার কি বলতো প্রায় ২ হাজারের বেশি সময়ে মাটির নিচে থাকার পরেও এই আর্মির অস্ত্রগুলি এখনো সমান ভাবে ধারালো ও বিপদজনক ! আরো একটা জিনিস লক্ষ করার মতন , এই তেরাকটা আর্মির সব সদস্যর মুখ কিন্তু ইস্ট ফেসিং , মানে পূর্ব দিকের নিদিষ্ট কোন লক্ষের প্ৰতি তাদের দায়িত্ব কেন্দ্রিভুত !

নিশো একটু নড়েচড়ে বসে বলে, " পূর্ব দিকে কি আছে ? " কয়েক মুহূর্ত চুপ করে ভিক্টরদা আবার বলে, সম্রাট কিন- শি- হুয়াং এর সমাধিসৌধ ! এর ফলেই এই হটাৎ আবিষ্কারের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায় ! ভাবা হয় এরা আসলে রাজা শি-হুয়াং এর সৈন্যবাহিনী ! এরকম ভাবার কারণ এর থেকে মাত্র 1 কিলোমিটার মধ্যেই লিসান মাউন্টেন এ পাওয়া গেছে শি-হুয়াং এর সিক্রেট নেক্রোপোলিস !
' সিক্রেট নেক্রোপোলিস ' মানে ?  
কিছুটা চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলো শন !  
দেখ, চিন দেশের ইতিহাসে সম্রাট শি- হুয়াং আজীবন স্বরণীয় কারণ তিনিই প্রথম রাজা যিনি সামগ্র চিনদেশ কে একত্রিত করতে পেরেছিলেন, তিনি আনুমানিক খিষ্ট্র পূর্ব ২৬০ থেকে ২১০ মৃত্যুর আগে প্রযন্ত চিনকে শাসন করে গেছেন ! জীবিত অবস্থায় এই মানুষটা ছিলেন অভূত খামখেয়ালি ধরণের.

 

চীনের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত যে বৃহৎ প্রাচীর, যাকে আমরা ' THE GREAT WALL OF CH INA ' বলে জানি সেটা কিন্তু তার রাজত্ব কালেই তৈরী করা হয় ! এই খামখেয়ালি রাজা মৃত্যুর পরেও নিজেকে বিলাসী সম্রাট রূপে প্রজাদের মধ্যে দেখতে চেয়েছিলেন ! ইচ্ছে ছিলো মৃত্যুর পরে পরকালেও রাজা হয়ে রাজত্ব করার. লি পাহাড়ে তার সমাধিসৌধ এখনো একটা 'আনসল্ভ মিস্ট্রি '!!!

কিরকম ??  
মুখ তুলে জানতে চায় রিমঝিম !!
ভিক্টরদা বলে, নেক্রোপোলিস মানে হলো একটা সম্পূর্ণ রাজ্কীয় সমাধি ক্ষেত্র, লি পাহাড়ের গোপন জায়গায় শি-হুয়াং এর এই নেক্রোপোলিসে রাজদরবার, অফিস, আস্থাবল, এমনকি রাজার প্ৰিয় বাগান নাকি অবিকল সত্যির মতন করে রাখা আছে !

  প্রায় ৩৮ বছর সময় লেগেছিলো এটা সম্পূর্ণ করতে ! এটা নিয়ে প্রচুর রোমাঞ্চকর গল্প এখনো বাতাসে ভাসে,. যেমন ধর , এখানে পরকালে রাজার ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমানে ধন-সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ! আর এই সম্পদের নাগাল যাতে কেউ না পায় সেই জন্য এই নেক্রোপোলিসের বিভিন্ন জায়গায় বানানো হয়েছে প্রচুর মৃত্যু ফাঁদ , যেগুলো আজ ও সক্রিয় !

এছাড়া আছে বিষাক্ত পারদের বড়ো বড়ো নদী ,
যেগুলো ঘিরে আছে সম্রাটের কবর কে !

                                    THE   SECRET  TOMB   OF   QIN-SHI- HUANG


এই বিষয়ে সিয়াম কিয়ান,  
যাকে বলা হয় চিনদেশের প্রথম ঐতিহাসিক, এর লিখিত বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এই নেক্রোপলিসের উচ্চত্তা নাকি ১১৪ ফিট এবং এর ভিতরে সত্যি কারের মুক্ত দিয়ে দিয়ে চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র ও ব্রোঞ্জ দিয়ে পাহাড় পর্বত তৈরী করা আছে ! এছাড়া আছে একাধিক সবুজ মূল্যবান পাথর, সোনা, আরো অনেক দামি দামি জিনিস ! সমাধিক্ষেত্রটি তৈরী হবার পরে এটাকে পুরোপুরি ঘাস ও গাছ পালা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে কেউ বাইরে থেকে চিনতে না পারে !

SIAM QUIAN , THE FIRST HISTORIAN OF CHINA
কিন্তু এটা কতটা সত্যি ??
ভিক্টরদা একটু হেসে বলে দেখ, রাজা শি-হুয়াং ছিলেন বিপুল সম্পদের অধিকারী আবার কিছুটা খামখেয়ালি, সুতরাং অসম্ভব বলা যায় না ! একটা ছোট্ট পরিসংখ্যন দি , টেরাকতা আর্মির যে মূর্তিগুলো আবিষ্কার হয়েছে সেগুলোর এক একটার বর্তমান মূল্য ৪.৫ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার.

আর মোট আবিষ্কার হয়েছে ৮ হাজার. তাহলে হিসাবে হচ্ছে. ৮০০০×৪.৫ = ৩৬ বিলিয়ন ডলার ! এর সাথে আছে ১৩০টা রথ, ৫২০টি ঘোড়া, আর ১০০টা অস্ত্র, সব মিলিয়ে যার মূল্য ৫ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় 37, 25, 70, 25, 00, 000. 00 !




THE FIRST PIT OF THE TERACOTTA ARMY

" ওরে বাবা......... বলো কি " !!!  
অর্ক চোখ গোল করে বললো !
" হমম " তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কি বিপুল মূল্য হতে পারে ঐ পুরো নেক্রোপলিসের ! নিশো আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করে , আজ ও কি এই সমাধী ক্ষেত্রে কেউ ঢুকতে পারেনি ?
" না, এর নাগাল এখন পযন্ত কেউ পায় নি "
খুব ছোট্ট ভাবে উত্তর দিলো ভিক্টরদা !
"আচ্ছা সরকারি তরফ থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে না কেন ?
" প্রথম প্রথম সরকারি দিকে ব্যাপারে ভাবা হয়েছিল , পরে অনেক গুলো কারণে বাতিল করা হয়,

যেমন, পাহাড়ের উপরে নেক্রোপোলিসের জায়গাটা এতটা দুর্গম যে খনন কার্য করা খুবই কষ্টকর, দ্বিতীয়ত হয়তো খনন করতে গেলে প্রাচীন এই স্মৃতিসৌধ এর ক্ষতি হতে পারে, এছাড়া এর সাথে ভিতরের বিপজনক মৃত্যু ফাঁদ ব্যাপারটা আছেই. যে পারদের নদীর কথা উল্লেখ আছে তার সত্যতা বিচার করা না গেলেও জিয়াঙ গ্ৰামের মাটিতে কিন্তু পারদের খোঁজ কিন্তু পাওয়া গেছে, তাই এই ব্যাপারটা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়াও যাচ্ছে না !

ভিক্টরদা জানালার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, ............ 
"একটাকথা সব সময় মাথায় রাখবি এই বিপুলা পৃথিবীর কতটাই আমরা জানি.......... জানা হয় নি বেশিরভাগটাই !  
হয়তো ভবিষ্যতে কখনো না কখনো এই রহস্য এর সমাধান হবে .............!!!
  ঠিক, ঠিক ........সবাই. একসাথে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো !!!!


THE MAUSOLEUM OF THE EMPEROR QIN-SHI- HUANG
টি একটা অপ্রতাশিত ভাবে খুজে পাওয়া ঐতিহাসিক আবিস্কারকে কেন্দ্র করে লেখা গল্প ।
যে আবিস্কার এক লহমায় পাল্ টে দিয়েছিল অনেক ভাবনার, হদিস দিয়েছিল জানার নতুন দিগন্তের , আলো ফেলেছিল ইতিহাসের চাপা পরে থাকা এক নতুন অধ্যায়ের ।

এখানে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনাটা সত্য , বাকি ঘটনা ও চরিত্র সব গুলোই লেখকের কল্পনায় সৃষ্ট সম্পূর্ণ কাল্পনিক ।

ধন্যবাদ ।। ।। সমাপ্ত ।।


All writings here are entirely the author's own.
Any use without permission is prohibited by law, as per Section 14 of the Copyright Act of 1957.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফাস্ট ফুড, চাউমিন বা ন্যুডলস। Health is Your Wealth. 🥣

🌍🌏 ধুবুলিয়া ঃঃ THE FORGOTTEN AIRPORT OF WORLD WAR2 [ পর্ব =১৫ ]

THE FORGOTTEN AIRPORT OF WW 2 পর্ব = ১৪🧧