ছেলেবেলা।। THE ARK OF MY STORY মাড়োয়ারি গোডাউন

🌈 আমার ছেলেবেলা

 পর্ব - ০১

 

THE ARC OF MY STORY ::             

     যখন প্রথম ভিডিও বানানোর চিন্তা মাথায় এসেছিলো, সেটা ছিল একরকমের খেয়াল,কারন তখন ও ভাবিনি যে কখনো ইউটিউব বা এই রকমের কোন সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আমি ভিডিও তৈরি করবো.........!

 আমি বা আমার সমমায়িকদের মতনই  স্কুলে পড়াশোনা করার  সময় মোবাইলের ব্যবহার ঠিক যে কি , তাই ভালো ভাবে  জানতাম না.  এরকম জিনিসের প্রতি আকর্ষণ আমার ছিল না। এখন যেটুকু শিখেছি বা বলা ভালো শিখে চলেছি সবটাই কাজের প্রয়োজনে । কতটা শিখেছি বুঝিনা, তবে আগের মতন আড়ষ্টটা অনুভব করিনা । এখন বুঝি সবটাই আমাদের অভ্যাস ।


 কলেজ এ ভর্তি হয়ে  প্রথম সামনা সামনি মোবাইলে দেখে ছিলাম. হাতে  এসেছে  আরও  অনেক   পরে । কিন্তু ছবি তোলার প্ৰতি একটা আকর্ষণ আমার কিন্তু অনেক আগের থেকেই ছিলো.  খুব ভালো ভাবে মনে আছে আমি টিউশন পড়ানোর টাকা  জমিয়ে আমার প্রথম ক্যামেরা কিনেছিলাম. তখন আমার শখ ছিলো সপ্তাহের  অন্তত একদিন  ( বেশির ভাগ রবিবার )  ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন  পুরানো, (  মূলত ঐতিহাসিক ) জায়গা বা জিনিসের ছবি তুলতাম... আর যত্ন করে অ্যালবাম সাজিয়ে রাখতাম. ( এগুলো এখনো আছে ) যদিও সবই  ষ্টিল পিকচার.  এখন ইচ্ছে আছে এই জায়গাগুলোতে  আবার  যাবো, এবারে  ভিডিও বানাবো.  নতুন  করে  অনুভব করব আর দেখবো  সময়ের  সাথে  সাথে আমার চোখ, মন ,আবেগ  কতটা  পরিবর্তন  হয়েছে ।


মাড়োয়ারি  গোডাউন  

ছেলেবেলা শব্দটির মধ্যে একরকমের অপরিমেয় তৃপ্তি ও সন্তোষ  আছে । এটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাই । শৈশব আর দাঁত অনেকটা একেই রকমের যখন থাকে গুরুত্ব বোঝা যায় না, কিন্তু যখন চলে জায়, না তখন বোঝা যায়  জীবনে এর গুরুত্ব  কতোটা । 
ছেলেবেলা র কথা বলতে গেলে কোথা থেকে যে  শুরু  করবো  তা  নিয়ে  একটু  ভাবনায়  পরে  যাই । আমার শৈশবের স্মৃতির একটা বড়ো অংশ জুড়ে আছে বিখ্যাত "মাড়োয়ারি গোডাউন." নামে বিরাট  বড় একটা বাড়ি । 

যদিও মারয়ারী বা  গোডাউন এর কারো সাথেই আমাদের সরাসরি কোন সম্পর্ক ছিল না , তবুও এরকম অদ্ভুত নামের জায়গার সাথে আমার ছেলেবেলার সম্পর্ক ছিল নিবিড়আর এই  রকমের অদ্ভুত নামের  একটা  আলাদা গল্প  আছে ,সেটা পরে বলবো।
সে গল্প যাই হোক না কেন, শৈশবের দিনে  এটা  ছিলো  আমার সব চেয়ে  আদরের  ও আনন্দের  জায়গা "   আমার  দাদু বাড়ি ".... 


এখনো যখন চোখ বন্ধ করে  ছেলেবেলার  কথা ভাবি  অনেক লাগার, ভালোলাগার ছবি চোখের  সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে.  যেমন দাদুবারির পিছনের ছোট্ট একফালি বাগান, তারপরে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে আমার একা-একা ঘুরে বেড়ানো  ঘুড়ি উড়ানো আরও কত কি।। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পরে  আমাদের  বাড়ি থেকে  দাদুর বাড়িতে যাবার  রাস্তাটার কথা। এটা ছিলো আমার কাছে সবচেয়ে প্ৰিয় , খানিকটা রূপকথার  বর্ণিত রাস্তায় মতন.... এবং  এডভেঞ্চার   পরিপূর্ণ. 
যার  অনেক  গুলো ধাপ  ছিল,  প্রথমে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে  দুটো বড়ো  বড়ো রানওয়ে পার হতে হবে,  লুকিয়ে যাতে কেউ জানতে না পারে, এই  জাইগা গুলোতেই  ধরা পরার  সম্ভনা  ছিল  খুব  বেশি।( বেশিরভাগ সময়ই  রাগ  বা অভিমান করে দাদু বাড়িতে চলে  যেতাম  এবং  একা একা )  

 


বড়ো  বড়ো রানওয়ে 
দুটোর পরে ছিল বিস্তৃণ ফাঁকা চাষের জমি.  এই জমি তে কখনো ধান, কখনো সর্ষে আবার  কখনো  কখনো বা আইড়ি ডাল চাষ হতো..  রাস্তা পার হবার সময় আমি সব সময় মনে মনে প্রাথনা করে বলতাম " আমাকে যেন কেউ দেখতে না পায় ". আসলে চেনা কেউ দেখার আগেই মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারলেই হলো আর কে পায় .  এরকম   অনেকবার   হয়েছে  আমি  রাগ  করে  বাড়ি  থেকে  পালিয়ে   রাস্তায়  ধরা  পরে  গিয়েছি। 

ছোটো বেলায় সর্ষে ফুলের মধ্যে দিয়ে দূর থেকে দাদুর বাড়িটি আমার শিশু মনের কল্পনায়  ছিলো  কমিক্স  বই এর  ছবিতে দেখা কোন  বিরাট  বড় একটা  দুর্গ এর ( ক্যাসেল ) মতন.
আরো মনে পরেএখানে আমার দাদু কে সবাই সম্ভাসন করতেন' পন্ডিত মশাই ' বলে. আর  আমি দাদুকে  ডাকতাম    দাদুভাই..... আবার দাদুও আমাকে উত্তর দিতো  'কেন ? 
দাদুভাই' . 
দুই জনই  দুজনের কাছেই ' '.দাদু ভাই।



আমার খুবই  গর্বের ছিল এই দাদু   বাড়ি  , এতো  উঁচু বাড়ি   আমার কোনো বন্ধুদের ছিলো না...  এমনকি আমাদের নিজেদের এতো বড়ো  ও উঁচু  বাড়ি ছিল  না.  মাঝে মাঝেই আমি সব   বন্ধুদের দাদু বাড়ি দেখাতে নিয়ে যেতে ভালো বাসতাম ..  ছোটো বেলার আমার একটা বিরাট মজার এবং আনন্দের কাজ. ছিল এটাই .।  যাবার  রাস্তায় মাঠের  মধ্যে দূর থেকে আঙ্গুল  তুলে এই উচু বাড়িটাকে   দেখাতাম। 
এটা  আসলে  ছিল 2nd WORLD WAR সময়কালীন BRITISH  AIRFORCE , R.AF এর  ব্যবহার করা একটা পরিত্যক্ত গোডাউন  )

                           






দাদু বাড়ি যাওয়ার টা আমার কাছে ছিলো অনেকটা একটা দেশ থেকে অন্য দেশে গোপনে 'বর্ডার ক্রস' করে প্রবেশ করার মতন.  যেখানে কোনো ভিসা ও পাসপোর্ট  লাগেনা .
আসলে রাগ করেই হোক বা মার খাবার ভয়েই হোক জানতাম একবার যদি বর্ডার ক্রস করে দাদু বাড়ি ঢুকে পড়তে পারি তাহলে নিশ্চিত...।।আর ফেরা নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিলো না...কখনো .  কারণ জানতাম ঠিকই কেউ না কেউ ঠিক খুঁজতে আসবেই.



 মনে পরে দাদুর বাড়ীর ঠিক পিছনে ছিলো ছোটো একফালি বাগান. যেটা ছিলো আমার খুবই প্রিয় জায়গা ...এই বাগানের ঠিক মাঝখানে ছিলো একটা সরু রাস্তা.  এই রাস্তায় শেষে হতো বিস্তীন মাঠে.( আসলে পুরো  বাড়িটাই  ছিলো একটা  বিরাট  বড়ো  মাঠের  ঠিক মাঝখানে ).ছেলেবেলায় এই    ছোটো  বাগান ও  তার  পরের  মাঠটা ছিলো    আমার   সমস্ত   রকমের   এডভেঞ্চারের  পটভূমি. এই ছোটো  বাগানের প্রতিটি  গাছ, ফুল, পোকা   ছিলো   আমার  প্রিয় বন্ধু..  আসলে এখানকার প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে আমার বন্ধন ছিলো অতি নিবিড় পুরোটাই   হৃদয় সাথে যুক্ত. এখনো চোখ বন্ধ করলে দাদুবাড়ি জানালায়  নীল অপরাজিতা ফুল  গাছটার কথা মনে পরে... যেটা বেশির ভাগ সময়   আমি  বিছানায়  বসে দেখতে পেতাম....   বিছানার  পাসেই  ছিল   বড়ো বড়ো  দুটো  জাণালা, এখাণে  বসে  বাগাণ  দেখতে  আমার  যে   কি  ভালো  লাগতো  ।

   
                                    
                          
                                


# আমার শৈশবের সমস্ত স্বপ্ন, আকাঙ্খা ও কল্পনার  উপরে এই বিরাট  আকৃতির ( শিশু র চোখে )  দাদু বাড়ি  প্রভাব  বিরাট । মাঠে বা বাগনে একা একাই খেলার সময় আমাকে চিনতে না পেরে যদি কেউ আমার বাড়ি কোথায় জানতে চাইতো, মনে মনে ভীষণ খুশি হতাম ( এটা একটা বিরাট মজার ব্যাপার ছিলো আমার কাছে )  
 আমি তাঁর কথার উত্তর না দিয়ে সোজা দাদুবাড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখতাম - "
 ওই .......যে দেখা যাচ্ছে ওই বাড়িটা " 

তিনি হেসে বলতেন ওহ  তুমিই বুঝি  আমাদের পন্ডিত মশাইয়ের নাতি'.  তোমার কথা সুনেছি, ঠিক আছে বাবা, যাও খেলা কর।



🌀  এখনো চোখ বন্ধ করে ভাবলে কতো কিছুই যে স্পষ্ট ভাবে ভেসে ওঠে.. বাড়িটার সামনে ছিলো বিরাট বড়ো বারান্দা.  এখানে  ছিল  বড়   বড়   মোটামোটা  পিলার । আর  দুটো   বিরাট  বিরাট দরজা । সামনের   এই   বারান্দায় দাদুভাই বেশি র ভাগ সময় তাঁর প্ৰিয় আরাম কেদারায় বসে বা  প্রায়  শোয়া  অবস্থায়  বই পড়তেন...  বই পড়া ছিলো তাঁর সব চেয়ে প্ৰিয় কাজ. তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ সন্তান। ( আসল নাম পন্ডিত  হেমচন্দ্র চক্রবর্তী )  মাঠে  ঘুড়ি  উড়ানোর  সময়  আমার সঙ্গি   দাদুভাই,  কারন  এখানে   আশেপাশে  বাড়ি   খুব  কম  ছিল  এবং  থাকলেও  সেখানে  আমার  বয়সি  কোন  শিশু   ছিল  না ।


                          

আমি দাদু বাড়িতে যাবার আরো একটা কারণ ছিলো দাদুর কাছে বিভিন্ন রকমের গল্প শোনা ( বেশী ভাগই ভুতের ). আর এই গল্প র  ভুত গুলো যখন রাতে ঘুমানো সময় আমাকে ধরতে আসতো.... তখন আবার দাদুভাই কাছেই আশ্রয় নিতে হতো. ভয় ভয়  মূখ  করে বলতাম ' "আমার খুব ভয় করছে দাদুভাই."  

আমার মুখ দেখে তিনি ব্যাপার টা বুঝতে পারতেন '. মিষ্টি হেসে বলতেন "ভয় কিসের দাদুভাই'. তুমি এক কাজ করো আমার এই পৈতে শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে পরো, তোমার কিছুই হবে না, কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না'.আর সেটাই হতো. ... পৈতে হাত দিয়ে শক্ত করে ধারার সাথে আমার সব ভয় কোথায় যে পালিয়ে যেতো.   ভাবতাম দাদুভাই ঠিকই আমার সাথে আছে  " পরক্ষনেই বলতাম   দাদু ভাই আমার আর ভয় করছে না." আমি ছিলাম তাঁর প্রতি অতন্ত্য শ্রদ্ধাশীল. 


তবে আমার আরো  একটা  প্রিয়  কাজ  ছিলো  ( Most Striking Feature) বাগান শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা. দেখতাম কুন্ডলি পাকানো সাদা, কালো মেঘ কিভাবে ভেসে যাচ্ছে, কখনো উত্তর দিকে কখনো বা দক্ষিণ দিকে. কখনো মনে হতো হরিনের পাল, আবার কখনো বা একপাল হাতি...!   যখন বিকালে দল বেঁধে পাখিরা বাসায় ফিরতো, কি ভালোই না লাগতো দেখতে. 


ছেলেবেলার  এই  কথা  লিখতে  বসে  আজ   অনেক  দিন  পরে  মনে  হচ্ছে  আমার  মাথার  উপরে  এই  আকাশ  এখন   কী  রকমের   আছে   ?  কতদিন  ঠিক  ভাবে   আকাশের  দিকে   তাকাইনি,  মনে  নেই ।  আমার  ছেলেবেলার  সেই  আকাশ  কি   এখনো   সেই  একই   রকমের  আছে  ?   না   সময়ের    সাথে  মাঝে     অন্য    সবকিছুর    মতন    এটাও   পাল্টে     গেছে  ?   মাঝে  মাঝে  খূব  ইচ্ছে   করে   আবার   দাদু বাড়ীর  মাঠে   শুয়ে   আগের   মতন   আকাশ   দেখতে  ।



🧧   আবার কখনো কখনো নিজেকে মনে মনে একজন বিরাট বড়ো বড়ো গোয়েন্দা বলে মনে করতাম. ফাঁকা দেশলাই বাক্সে দিদুর দেওয়া পয়সা ঢুকিয়ে বাগনে একটা গাছের তলায় পুঁতে দিয়ে বাড়ি চলে যেতাম...   "বলতাম হারিয়ে ফেলেছি দিদু".. কিছু দিন পরে আবার নিজেই সেটা গোয়েন্দা হয়ে খুঁজে বার করে দিদু কে দেখিয়ে বলতাম "দেখলে !  [ এই বাক্য আমার ছেলে ও খুব ব্যবহার করছে ] 
  আমি ঠিক খুঁজে বের করলাম, কতো বুদ্ধি আমার "দিদু মিষ্টি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন .
  "তাইতো, আমার   দাদুভাই তো দেখছি খুবই বুদ্ধিমান "। 
   খুশির  আনন্দে  আমার  মাথা  উঁচু  হয়ে  যেতো ।


               


ভালো   থাকুন,     
সুস্থ   থাকুন।
              
 বাকিটা  পরের  পর্বে

                                              

🧧      ধন্যবাদান্তে
🆁︎ . 🆂︎🆄︎🅱︎🅷︎🆁︎🅾︎        All writings and other content here are entirely the author's own.
Any use without permission is prohibited by law, as per Section 14 of the Copyright Act of 1957.  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফাস্ট ফুড, চাউমিন বা ন্যুডলস। Health is Your Wealth. 🥣

🌍🌏 ধুবুলিয়া ঃঃ THE FORGOTTEN AIRPORT OF WORLD WAR2 [ পর্ব =১৫ ]

THE FORGOTTEN AIRPORT OF WW 2 পর্ব = ১৪🧧