ছেলেবেলা .. THE ARK OF MY STORY ( মাড়োয়ারি গোডাউন ) পর্ব -০2
"ON APPROACHING THE PAST
পর্ব -02
এখনো যখন চোখ বন্ধ করে দাদুবাড়ীর কথা ভাবলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা বিরাট আকৃতির বাড়ীর , যার আকাশছোঁয়া ছাদ ( হয়তো আমার শিশু চোখ বলেই ) বড়ো বড়ো দরজা , সামনে গোলাকৃতির উঠোন আর বিরাট বড়ো টানা এক বারান্দা.. যেখানে আছে উঁচু উঁচু মোটা মোটা থাম. সামনের দিকে মোট তিনটি ঘর থাকলেও একটা ঘর সব সময় তালা দিয়ে বন্ধ করা থাকতো...... শুনতাম ওই ঘরে অনেক চাল, ডাল, গম এই সব নাকি আছে ( যেগুলো সব মাড়োয়ারিদের )... আমি ওই ঘরটা কখনো খুলতে দেখিনি... তবে মনে পরে, ঘরটার দরজার নিচে প্রচুর কালো কালো পোকা দেখতে পেতাম .
এই পাশ দিয়ে আমরা লুকিয়ে ঢুকতাম ,
এখন জঙ্গল ।
আমি সব সময়ে পিছন দিক দিয়ে এই বাড়িতে ঢুকতাম ,এই দিকেই ছিল রান্না ঘর। জানতাম রান্না ঘরে দিদুভাই থাকবে,,অনেক দূর থেকেই আমি খুন্তি নাড়ানো শব্দ পেতাম. দিদু কাঠের উনোনে রান্না করতেন.... কম মশলা দিয়ে রান্না করতো, কিন্তু তার স্বাদ ছিলো অসাধারণ, রান্না করার ঘরটা ছিলো খুবই ছোটো .( গোডাউন বলে হয়তো ) দিদু প্রায়সই উনোনের গরমে ঘেমে যেতো. আমার ভাললাগতো বাগান মধ্যে দিয়ে চুপি চুপি ঢুকে জানলা উঠে তাকে চমকে দেওয়া... 'ওই দিদু'.।।
দিদু আনন্দ মিশ্রিত মুখে ( মুখটা এই সময় চক চক করতো আমার এটা খুবই ভালো লাগতো. বড়ো হবার পরে এই রকমের তৃপ্তি ও সন্তোষ খুব কম চোখে পরে )
দাদুবাড়িতে থাকার সময়ে কালবোশেখি ঝড় কবলে পরার অভিগ্যতা বোঝানো মুস্কিল । দিগন্ত বিস্তৃত বিরাট ফাঁকা মাঠের মধ্যে একটা দ্বিতীয় বিশ্বজুধের সময়ে নির্মিত গোদাউনের ভিতরে কয়েকজন মানুষ আর বাইরের তিব্র কালবোশেখি ঝড় । যে কোনো সময় টিনের ছাদ উড়ে যেতে পারে । তবে ঝড়টা একবার কোনভাবে পার করে ফেলতে পারলে সব নিশ্চিন্ত । ঝড়ের পরে নামত বৃষ্টি সঙ্গে চমৎকার বাতাস খোলা জানালা দিয়ে চোখে মুখে বাতাশের জাপটা লাগতেই মন মেজাজ সব ভাল হয়ে যেত, মনে হত চারপাশটা ভিজে কেমন আরো কালচে সবুজ হয়ে উঠেছে , আর সকালবেলায় জলেভেজা এই মাঠের মধ্যে ঘুড়ে বেরাতে খুব আনন্দ পেতাম । ভাল লাগার যদি কোনও পরিমাপ করা যেত তাহলে এটা হত সব চাইতে বেশি , দূর থেকে দেখে আমার মনে হত পুরো মাঠে যেন সাদা রঙের একটা মশারি টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে । আবার পূর্ণিমার রাতে চারপাশ যখন নিরঝুম হয়ে যেত তখন খোলা জানালা দিয়ে দাদুবাড়ীর পিছনের বাগানের মধ্যে দিয়ে চাঁদ দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগতো । এই আলোতে চারপাশের বিস্তৃত প্রান্তর একদম ধপধপে সাদা হয়ে যেত । আমি মনে মনে ভাবতাম চাঁদটা যেন জ্বলে উঠেছে আর তার ভিতরে সাদা চুলওলা একটা বুড়ী তার চরকাই সুতো কেতে যাচ্ছে অনবরত । এখন জানি , চাঁদ নিয়ে এই কল্পনা শুধু মাত্র আমাদের মধ্যে নয় , এটা এক রকমের প্রারিডলিয়া মানে এক জায়গার মানুষ চাঁদের মধ্যে এক-এক রকমের ছবি খুজে পায়,যেমন চিনের মানুষেরা চাঁদের মধ্যে দেখে একটা বিরাট খরগোশকে, ইউরোপ মহাদেশে দেখা হয় এক জন দণ্ড-প্রাপ্ত মানুষ হিসাবে , যিনি আভিশাপের দ্বারা চাঁদে নির্বাসিত , আর আমরা দেখি একজন সাদা চুল সুতোকাটা বুড়িকে । এগুলো সবই মানুষের মনের কল্পনা ।
আমার ছেলেবেলার সেই জানালা এখন ঢেকে গেছে গভীর জঙ্গলে । এখান থেকেই আমার সব কিছু দেখা হতো ।
একটা মজার কথা খুবই মনে পরে. যেটা না বললেই নয়, ☺️( যদিও তখন মোটেও মজার ছিলো না). দাদু বাড়ীর ছিলো মাঠের মধ্যে.. বাড়ীর একদম পিছন দিকে মাঠ পার হয়ে বিরাট উঁচু উঁচু বড়ো বড়ো গাছের লাইন ছিলো... দূর থেকে দেখে বিশাল একটা জঙ্গল মনে হতো. আমার ওই দিকে যাবার বারণ ছিলো.. কারণ দিদু বলে ছিলো দাদুভাই ওই দিকে রাক্ষস, খোক্ষস দের বাস ( ভয় দেখানোর জন্য,যাতে আমি একা একা দূরে কোথাও না যাই , কয়েক বছর পরে এটা রাক্ষসদের বদলে, ছেলেধরা তে পরিবতিত হয়েগিয়েছিল ) ... তুমি কিন্তু ভুলেও ওই দিকে যাবে না..
আমার শিশু মনে অসীম কৌতূহল সৃষ্টি করে ছিলো ওই রাক্ষস পাড়া.. মনে মনে ভাবতাম যেকরেই হোক হয়ে ওই রাক্ষসদের শায়েস্থা করতেই হবে . মাঝে মাঝে আবার ওই রাক্ষস পাড়া থেকে প্রচুর হই হই , চিৎকার, চেঁচামেচি শুনতে পেতাম... সঙ্গে সঙ্গে আমি তৈরী হয়ে যেতাম রাক্ষস দের মোকাবিলা করার জন্য.... যদিও আমি অনেক চেষ্টা করেও কখনো কোনো রাক্ষস ওখানে দেখতে পাই নি. আমার শিশু চোখের পক্ষে সেটা ছিলো অনেক দূরে ( যদিও পরে বড়ো হয়ে জেনেছি আসলে ওটা ৭নং গ্রুপ,
আর চিৎকার হতো বেশিরভাগ সময় ফুটবল খেলা নিয়ে,). এখন এই রাক্ষস পাড়ায় আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে... যদিও কখনো কাউকে এই শিশু মনের কথা বলা হয় নি. এখন এই কথা গুলো মনে পরলে নিঃশব্দে হাসি পায় ।
এই জানলার বাম দিকে ছিল আমার অতি প্রিয় সেই ছোট্ট বাগান ।
THE ARK OF MY STORY ::
এখন বুঝি যে, আসলে দাদুবাড়ি সংলগ্ন এলাকা ছিলো ( আমার মনে) একটা দেশের মতন, যতদূর চোখ যায় ততটাই বিস্তৃত তার সীমানা.
একটা ছোট্ট ঘটনা যেটা কখনো ভোলার নয়. দাদুর বাড়ীর সামনের লম্বা বারান্দার একদিকে কিছু দিন মুরগি পোষা হয়েছিল.( মূলত ডিম খাবার জন্য ). এটা আমার কাছে একটা অন্যতম আকর্ষণ ছিলো খাঁচা পাহারা দেওয়া আর খাঁচায় ডিম দেখলেই দ্রুত বাড়িতে খবর দেওয়া. পরের দিকে আমি নিজেই আনতাম , কারণ খাঁচাতে প্রায় অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হতো . আর ছোটো বলে আমার পক্ষে কাজটা ছিলো সহজ . আমি ডিম তুলে আনা এবং সবাই কে সেটা দেখানোর মধ্যে বিরাট আনন্দ পেতাম ( খানিকটা বাহাদুরি ও বটে ).কিন্তু এই বাহাদুরি টা বন্ধু দের দেখানো না পযন্ত শান্তি পাচ্ছিলাম না... তাই একবার " জানিস আমার দাদুবাড়ি র মুরগির খাঁচা থেকে আমি একাই ডিম আনতে পারি, চল তোদের দেখাবো. যথারীতি লুকিয়ে প্রথম ডিম টা নেবার পরে যখন দ্বিতীয় ডিম টা হাতে নিলাম মুরগির খাঁচায় হুটোপাটি লেগে গেলো এবং একটা মুরগি দ্রুত আমাকে আক্রমণ করলো, আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি খাঁচা থেকে বাইরে যাবার জন্যমাথা টা উপরে উঠালাম সঙ্গে সঙ্গে খাঁচার বেরিয়ে থাকা তাঁরে ( যাকে গুনা বলে ) আমার বা দিকের গালে টানা দাগ পরে গেলো, রক্তারক্তি কান্ড, যথারীতি বাড়িতে হুলুস্থূল .রক্ত পরে বন্ধ হলেও.এই প্রসঙ্গে মনে পরে অনেক বছর পরে, যখন কলেজ পড়ি ( সিটি কলেজ, আমহাস্ট স্ট্রিট ) কয়েক জন আমাকে ঘিরে বলছিলো, " কি ! বাবু, বা গালে তো অলরেডি একটা কাটা দাগ দেখছি , ডান গেলেও একটা চিন্হ করে দি , কেমন হয় !!!!! ( এই সময়টা নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে আমার)






মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন