ওয়েব-সিরিজ :: কারাগার . পরিচালনা :: সৈয়দ আহমেদ শাওকি। গল্প :: নিয়ামত উল্লা মাসুম । ওটিটি : হৈচৈ . মুক্তি : অগাস্ট ২০২২

 🎄 আমার অনুভূতি ::


🎯 "
অনুভূতি হোক বহিমুখী, আবেগ হোক মুক্ত,
গল্পের জাদু ছড়িয়ে পড়ুক
দেশ, সীমানা হতে  মুক্ত ।.....


প্রিয় বন্ধুরা গল্প-ওলার আসরে আপনাদের স্বাগতম ,
আজকে আবার হাজির হয়েছি " নতুন একটা 
অনুভূতি " আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে ।
আজকের  গল্প সম্প্রতি    হৈচৈ-প্লাটফরমে  মুক্তিপ্রাপ্ত  রহস্য-রোমাঞ্চকর  ওয়েব সিরিজ
  "কারাগার " ( পার্ট- 0১) কে নিয়ে ।



🚩 ওয়েব-সিরিজ   ::  কারাগার
   অভিনয়ে ::           চঞ্চল চৌধুরী,  আফজাল হোসেন,   ইনতেখাব দিনার,  তাসনিয়া ফারিন,  এফ. এস. নাঈম  ও  আরো অনেকে।
পরিচালনা ::         সৈয়দ আহমেদ শাওকি।
গল্প ::                   নিয়ামত উল্লা মাসুম ।
ওটিটি :               হৈচৈ
মুক্তি :                  অগাস্ট ২০২২



🌿  বন্ধুদের কি কখনো কারাগারের ভিতরে আসার অভিজ্ঞতা হয়েছে ?   ভাবছেন এ কেমনতর প্রশ্ন ?  সত্যিই তো,কারন  না হওয়াটা  বাঞ্চনীয় ।।  আসলে কারাগার শব্দটি আমাদের মনের মধ্যে যেসব ছবিগুলো ফুটিয়ে তোলে , সেগুলো মোটেও সুস্থ  বা কাম্য নয় ।
 বন্দি জীবন কখনোই কারো পছন্দের না । যদিও  সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কারাগার শব্দের পরিবর্তন হয়ে গেছে সংশোধনাগারে ।  কিন্তু তাহলেও সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে কারাগার সম্পর্কের ধারণার কতটা পরিবর্তন হয়েছে সেটা কিন্তু যথেষ্ট প্রশ্ন সাপেক্ষ।
কারাগারের ভিতরে বন্দি জীবন নিয়ে বহু হলিউড, বলিউড সিনেমা আমাদের সবারই দেখা । এই সব সিনেমা গুলোতে কারাগারের  ভিতরের  অত্যাচার এবং  তারপরে এখান থেকে পালানোর বিষয়টি প্রধান্য দেওয়া হয় ।
কিন্তু কেমন হয় যদি ব্যাপারটা উল্টো হয়, মানে মনে করুন কোন একটি কারাগারের বহুদিন ধরে বন্ধ একটা সেলে যদি আকস্মিক ভাবে এক কয়েদির আবির্ভাব ঘটে তাহলে  কেমন হয় ? আবার দেখা যায় এই এই মানুষ যদি ২৫০ বছরের পুরোনো শাস্তি প্রাপ্ত এক কয়েদি হয় তাহলে ?
হ্যাঁ ,ঠিকই পড়েছেন ২৫০ বছরের পুরোনো কয়েদি , আবার তাঁর আবির্ভাব জেলখানার এমন এক সেলে যেটা কিনা বিগত ৫০ বছর ধরে বন্ধ । তাহলে এই 
কারাগারের  আসল রহস্য কি,  আপনার কি জানতে ইচ্ছে করবে না ?

এইরকমের একটি টানটান রহস্য ,রোমাঞ্ছকর উত্তেজনাপূর্ণ মাস্টার পিস ওয়েব-সিরিজ বাংলার থ্রিলার প্রেমী দর্শকদের উপহার দিয়েছেন, পরিচালক সৈয়দ আহমেদ সাওকী ও লেখক নিয়ামত উল্লা মাসুম ।
এ এমন এক অদ্ভুদ আলো আধারী গল্পের মায়াজাল যা  আমাদের সবাইকে আবদ্ধ করে রাখবে,   দর্শক ফিকশন আর রিয়ালিটি মধ্যে পার্থক্য করতে পারবো না,  গল্পের জগৎ দর্শকের কাছে মনে হবে বাস্তব ।  এই ভাবে কখন যে আপনি কারাগারের অন্ধকারের জগতের মধ্যে ঢুকে পড়বেন বুঝতেও পারবেন না । ।
And I Strongly Feel That,its Very Difficult to  Create Such types Of Creation.
আর এই ভীষণ কঠিন কাজকে বাস্তবে অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে "কারাগার "  ওয়েব -সিরিজটিতে।
যা  বাংলার থ্রিলার প্রেমী দর্শকদের মুগ্ধ করবে ।

🎴   মূল গল্প ::

ঢাকা  শহরের  মধ্যে অবস্থিত আকাশ নগর কেন্দ্রীয় কারাগার,  ব্রিটিশ আমলে নির্মিত নামকরা কারাগার,  অতন্ত হাই প্রোফাইল সাজা  প্রাপ্ত দাগি আসামি এই কারাগারের বন্দি ।  কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার মোস্তাক আহমেদ [ অভিনয়ে ইনতেখাব দিনার,]  ভালো মনের মানুষ হলেও বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ফেঁসে আছেন,  যেমন  কিছুদিন আগেই জেলের ভিতরের সি.সি ক্যামেরার ফুটেজ সংবাদ মাধ্যমে লিক হয়ে গেছে,   যেই ফুটেজ এক সন্দেহজনক অপরিচিত মহিলাকে জেলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে ।  কে এই মহিলা আর তার উদেশ্য কি ?  কেন তিনি জেলের মধ্যে এসেছিলেন  সেটার উত্তর কারো জানা নেই । আর কিভাবে জেলের এই সেনসিটিভ ইন্টানাল ফুটেজ বাইরে সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে  পড়লো তাও জানা যাচ্ছে না ।

         

এই সব নিয়ে ডিপার্টমেন্টের উদ্ধৃতন  কর্তৃপক্ষ জেলার সাহেবের উপরে প্রচন্ড বিরক্ত ও উত্তেজিত, মোস্তাক সাহেবকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে, তদন্ত করে সঠিক কারণ  দশানোর জন্য ।  এদিকে জেলার সাহেবের একমাত্র ছেলে সজীব, বেটিং অপরাধে যুক্ত,  তিনি ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চান,   কিন্তু যত দিন ভিসা না পাওয়া যাচ্ছে তিনি তাকে নিজের জেলেই  পরিচয় গোপন করে কয়েদি সাজিয়ে লুকিয়ে রেখেছেন ।

এই আকাশ নগর কারাগারের বন্দি মোট কয়েদির সংখ্যা ৩২৫ ।  কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় বন্দিদের গুনতে গিয়ে আবিষ্কার হয় সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৩২৬ জন ।  অর্থাৎ একজন এক্সট্রা, সাধারনত কয়েদি পালিয়ে  যায় তাই  কয়েদির সংখ্যা  কমে যেতে পারে,  কিন্তু  এখানে  বেড়েছে  । শুধু  তাই  নয়, এই অতিরিক্ত কয়েদিকে আবার পাওয়া গেছে জেলের সবচেয়ে পুরোনো সেলে,১৪৫   নাম্বার ঘরে । আর আকাশনগর কারাগারের এই ঘর  রহস্যময়,  ৫০ বছরের বেশি দিন ধরে বন্ধ, বাইরের তালায় মরচে পরে গেছে ।   জেলের   মধ্যে  প্রচলিত  গল্প , এই ১৪৫ নং ঘরে যে কয়েদিকেই আটকে রাখা হতো তাকেই পরের দিন সকালে ঝুলন্ত মৃত অবস্থায় পাওয়া যেতো ।  তাই এই ঘরটি চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।

স্বাভাবিক ভাবে সবার মনে কৌতূহল এই বন্ধ সেলে মাথা ভর্তি পাঁকা চুল, মুখ ভর্তি দাঁড়িগোফের জঙ্গল আর বস্তা দিয়ে তৈরী পোশাক পরা এই লোকটি কে ?  আর বাইরে থেকে বন্ধ একটা সেলের ভিতরে সে ঢুকলো কিভাবে ?  কোন জাদুবিদ্যার বলে ? সে কি আদেও মানুষ ? না অন্য কিছু । জেলার সাহেবের মাথায় কিছু আসেনা ।


এই রহস্যময় কয়েদিকে [ অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী ] বার বার জিজ্ঞাসা করে, মেরে-ধরেও কিছু বের করা যায় না। কয়েদির ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকেও কিছুই তথ্য পাওয়া যায় না। একসময় বোঝা যায় লোকটি বোবা ও কালা। সে লিখতে পারে কিন্তু সেটাও ফারসি ভাষায়, তার লেখা থেকে মাত্র দুটো শব্দ উদ্ধার করা যায়   "২৫০ বছর " আর  " মীরজাফর "।
এমনিতেই জেলার সাহেব জটিল পরিস্হির মধ্যে আছেন তার উপরে এই হটাৎ আবির্ভাব ঘটা অদ্ভুত  ধরনের কয়েদিকে নিয়ে কি করবেন বুঝতে পারেন না ।   
মোস্তাক আহমেদ   তার বন্ধু  ডি.বি গোয়েন্দা আসফাকের  [ অভিনয়ে এফ.এস. নাঈম ] সাহায্য চান। কয়েদির আকার-ইঙ্গিত বোঝার জন্য আসফাক কারাগারে আনে তার পরিচিত,  " মাহা " নামে একজন মেয়েকে [ অভিনয়ে তাসনিয়া ফারিন ]


মাহার সাথে এই অদ্ভুত লোকটি ইশারায় কথা বলা শুরু করে। বেরিয়ে আসে এক অদ্ভুত গা হিম করা গল্প, জানা যায় ""বাংলার  সম্রাট মীরজাফরকে" হত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী সে, ২৫০ বছর ধরে বিভিন্ন জেলে বন্ধি থাকার পরে এখন এই আকাশনগর কারাগারে এসেছে। কিন্তু কিভাবে এসেছে কেন এসেছে সেগুলো সে জানে না ।  আর ১৪৫ নং বন্ধ ঘরের মধ্যে সে কিভাবে ঢুকলো সেটাও মনে নেই । তবে এখানে আসার আগে আনন্দমান সহ ভারতের বিভিন্ন আলাদা-আলাদা জেলে সে বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছে । 

ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হলেও, তাকে বার বার জেরা করেও অন্য আর কিছু বের করা যায়  না । ক্রমশ এই রহস্যময়  বন্দির অলৌকিক গল্প পুরো কারাগারে ছড়িয়ে পরে । অন্যান্য কয়েদিদের কাছে এই রহস্যময় ব্যক্তি এক অলৌকিক গাজীবাবা আখ্যা পেয়ে যায়। তাকে রীতিমতো পূজো করা শুরু হয় । ১৪৫নং সেলের বাইরে মানত করার ধুম পরে যায় । কিন্তু এই ঘটনার আসল রহস্য কি সেটা উদ্ধার হয় না ।
এই ভাবে গল্প যত এগোতে থাকে রহস্য ততবেশি জট পাকাতে থাকে।  সিরিজটা দেখতে দেখতে দর্শকের মাথায় অনেকে  প্রশ্নের উদ্ভব হয় ।  যেগুলো 
আমীমাংশিত  থেকে যায় প্রথম পর্বে ।
আশা করা যায় দ্বিতীয় পর্বে কারাগারের সব রহস্য দ্বার উন্মোচন হবে, 
তাই প্রথম পর্ব শেষ হবার পরে মুগ্ধ দর্শক অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় দ্বিতীয় পর্বের জন্য ।
🎴    আমার ভালোলাগা ::
ভালোলাগার কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় সিরিজটার
টানটান গল্পের কথা।যুক্তি আর তর্কের চেনা ছকের বাইরে থাকা সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের মানুষদের নিয়ে লেখা রচনা। দর্শক দেখবেন, ভাববেন, বোঝার চেষ্টা করবেন আর প্ৰতি মুহুতে গল্পের সাথে একাত্ম হতে থাকবেন । এতো সুন্দর প্লট প্রেসেন্টেশন আপনাকে মুগ্ধ করবে। অনেকে প্রশ্নের উত্তর হয়ত এই পর্বে পাওয়া যাবে না, তবুও কারাগারের প্ৰতি আপনার আকর্ষণ কমবে না।

লেখক নিয়ামত উল্লা মাসুম নিজেই স্বীকার করেছেন অনেকে দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল তার এই গল্প। ওয়েব সিরিজর বেশিরভাগ দৃশ্য এর শুটিং হয়েছে   পুরানো ঢাকার  "সেন্ত্রাল কারাগারে "।   এই  গল্প লেখার জন্য লেখক বার বার ছুটে গেছেন সেখানে , বের করেছেন এমন অনেকে রহস্যময় তথ্য, যা বাইরের মানুষের অজানা ।  যেমন  সত্যি সত্যি গাজী পীর নামে এক কয়েদি হটাৎ করে আবির্ভাব হয়েছিল, এই 
"সেন্ত্রাল কারাগারে "  ।  সে কোথা থেকে আসলো, কিভাবে আসলো কেউ জানে না,  এখানে তার নামে বলা হতো,  "গাজী বাবার এক ছোঁয়া, সব কিছু ধোঁয়া ধোঁয়া",। এখনো  কেন্দ্রিয় কারাগারের ভিতরে ঢুকলে এই  পীরের মাজার দেখা যায় । এই ভাবে সত্যি ঘটনা ও ইতিহাস কে  আশ্রিত করে তিনি এই গল্পটা তৈরী করেছেন ।
আমার দ্বিতীয় ভালোলাগা অবশ্যই অভিনয় দক্ষতা, সিরিটির প্রতিটি অভিনেতা নিজের নিজের চরিত্রে মুগ্ধ হবার মতন অভিনয় করেছেন। তবে চঞ্চল চৌধুরী সব চেয়ে ভালো । তিনি আবার অভিনেতা হিসাবে নিজের জাত প্রমান করলেন। প্রমান করলেন নিজেকে উল্টে-পাল্টে চরিত্রের সাথে একাত্ম হওয়ার শিল্পে তিনি উচ্চমানের সম্পদ।
তাকদীর, বলি পরে কারাগার, আবার তার একটা মাস্টারস্টোক।
এখানে তিনি একজন বোবা-কালা মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই বোবা-কালা মানুষটির মনের মধ্যে থাকা ক্ষত, যন্ত্রনা,আবেগ,নীরবতা শুধু  মাত্র মুখের এক্সপ্রেশন ও বডিল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে তিনি যেভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তা অসাধারণ বললেও কম হয় ।



তাই বন্ধুদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ অবশ্যই  "কারাগার "  ওয়েব -সিরিজটি দেখুন এবং এই রহস্যের জালের ভিতর থেকে সঠিক গল্পের নির্যাস উপভোগ করুন। সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে না, তবে আপনি দাঁড়াতে পারবেন যুক্তি আর তর্কের চেনা ছকের বাইরে একটা অসামান্য উপস্থাপনার সামনে ।

🌀🌀 আমার  ব্যক্তিগত রেটিং ৯.৪/১০

প্রিয় বন্ধুরা ,আবার দেখা হছে আগামি পর্বে
সবাই ভাল থাকুন,
সুস্থ থাকুন ।


 AUTHORITY OF
R. Subhro      





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফাস্ট ফুড, চাউমিন বা ন্যুডলস। Health is Your Wealth. 🥣

🌍🌏 ধুবুলিয়া ঃঃ THE FORGOTTEN AIRPORT OF WORLD WAR2 [ পর্ব =১৫ ]

THE FORGOTTEN AIRPORT OF WW 2 পর্ব = ১৪🧧