𝐑𝐨𝐡𝐢𝐥𝐥𝐚 𝐖𝐚𝐫 𝐌𝐞𝐦𝐨𝐫𝐢𝐚𝐥 𝐌𝐨𝐧𝐮𝐦𝐞𝐧𝐭, 𝐊𝐨𝐥𝐤𝐚𝐭𝐚 ,পুরোনো কোলকাতার গল্প

পুরোনো কোলকাতার গল্প

একটা স্মৃতিস্তম্ভ ও একটু গল্পl,𝐓𝐡𝐞 𝐑𝐨𝐡𝐢𝐥𝐥𝐚 𝐖𝐚𝐫 𝐌𝐞𝐦𝐨𝐫𝐢𝐚𝐥 𝐌𝐨𝐧𝐮𝐦𝐞𝐧𝐭, 𝐊𝐨𝐥𝐤𝐚𝐭𝐚

এই কোলকাতা শহর সাক্ষী কত পুরানো ঘটনার ,অনেক ইতিহাসের। যার অন্যতম শহরের স্মৃতিস্তম্ভ, যেগুলি নানা ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এর অন্যতম রোহিলা ওয়ার মেমোরিয়াল মনুমেন্ট,
আজকে তার সাথে জড়িত গল্প, ইতিহাস।

প্রায় ১৫ মিটার উঁচু, অর্ধবৃত্তাকার [ 𝐇𝐞𝐦𝐢𝐬𝐩𝐡𝐞𝐫𝐢𝐜𝐚𝐥 ] ছাদ, এবং ডোরিক স্থাপত্যে বানানো মজবুত থাম এই   সৌধকে এক অনন্যসুন্দর রূপ দিয়েছে। তবে স্মৃতিস্তম্ভের ভিতের এক ধারে একটা স্মৃতিফলক বসানো হয়েছে ১৭৯৫  খ্রিস্টাব্দে, যা দ্বিতীয় রোহিলা যুদ্ধে শহীদ সেনানায়ক ও সৈন্যদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
কিন্তু কারা এই রোহিলা ?
আর কেনই এই স্মৃতিস্তম্ভ, কলকাতার বুকে ??

 
  সময়টা 2004,তখন কলকাতা শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে পুরানো ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত রূপরস গন্ধ  আরোহন করা আমার অন্যতম ভালোবাসা । এই ভালোবাসা ধীরে ধীরে নেশায় রূপান্তর হতে সময় লাগেনি, আমি  ইতিহাসের ছাত্র, ও গুনমুগ্ধ ভক্ত। পুরানো স্থাপত্য, শিল্পকলার পিছনের একটা যে গল্প লুকিয়ে থাকে সেটার প্ৰতি আকর্ষণ আমার বরাবর । আমি ছাত্র, টিউশুনির করার টাকায় কেনা আমার ক্যামেরা কোডাক্ট কেবি-১২ তখন আমার নিত্য সঙ্গী।

এই ক্যামেরায় তোলা ২০০৪ সালে তোলা মূল ছবিটি, ( দ্বিতীয় ছবিটা )
আজ ঠিক ২০ বছর পরে নিজের তোলা ছবি আঁকার চেষ্টা করলাম। তার সাথে এই লোকচক্ষুর আড়ালে একটা ইতিহাসকে চেষ্টা করলাম আরও একবার রোমান্থন করার।°

রোহিলারা আসলে একটি দুর্ধর্ষ যুদ্ধবাজ উপজাতি, এদের আদি বাস মূলত আফগানিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলে ( "রোহিলা" অর্থ "পর্বতযাত্রী" পশতু মূল শব্দ "রোহ" যার অর্থ "পর্বত"),  এরা বেশিরভাগই পশতুনদের (ওরফে পাঠান)  ইউসুফজাই উপজাতির বংশধর ছিলেন।
রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় মোগল সম্রাট ঔরংজেব এদের সাহায্য নেন ও ভারতে বসবাসের সুযোগ করে দেন । এরা বেরিলি, রামপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে, আর অঞ্চলটার নাম দেয় রোহিলখণ্ড [𝐑𝐨𝐡𝐢𝐥𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝]
সময়ের সাথে সাথে আফগানিস্তান থেকে আরো রোহিলারা এসে ভিড় জমাতে থাকে রোহিলখণ্ড ও সংলগ্ন এলাকায়, এর ফলে সমস্ত অঞ্চলটা হয়ে ওঠে রোহিলা অধ্যুষিত, এক মুক্তাঞ্চল।

  ঔরংজেবের মৃত্যুর পরে ,ভারতে মোগল শাসনব্যাবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। সুযোগসন্ধানী রোহিলারা এই সময়ে  রোহিলখণ্ডকে আলাদা রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করে। স্বাধীন ভাবে রাজ্য শাসন চালাতে শুরু করে।
ইতিমধ্যে পশ্চিমে দুর্ধর্ষ মারাঠারাও শক্তিশালী হয়ে উঠছিল, যারা সমস্যা তৈরি করছিল রোহিলাদের জন্য। মারাঠাদের দমনে রোহিলারা সাহায্য চায় তৎকালীন আউধের নবাব সুজা-উদ-দৌলার কাছে।

সুজা-উদ-দৌলা মারাঠাদের বিরুদ্ধে রোহিলাদের সাহায্য করতে রাজি হলেন, কিন্তু বিনিময়ে চাইলেন চল্লিশ লক্ষ টাকা! রোহিলাদের কোনো উপায় ছিল না, তাই এই শর্তেই রাজী। কিন্তু যুদ্ধের পরে রোহিলারা তাঁদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলো না।
তাঁরা চল্লিশ টাকাও নবাবকে দিল না। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নবাব শরণাপন্ন হলেন ব্রিটিশদের। ব্রিটিশরাও তখন রোহিলাদের বাড়বড়ন্ত নিয়ে খুব চিন্তিত।

১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে হলো সেই মারাত্মক যুদ্ধ। নবাবের সৈন্য ও ব্রিটিশ সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্নেল আলেকজান্ডার চ্যাম্পিয়ন, আর রোহিলা সৈন্যদের পুরোভাগে ছিলেন রহমত আলী খান। রোহিলারা পরিজিত হল। কিন্তু তাঁরা গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলো।
১৭৯৪ সালে জেনারেল এবারক্রমবির নেতৃত্বে রোহিলাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত করেন । এই যুদ্ধে প্রায় ২৫০০০ রোহিলা মারা গেলো।

যুদ্ধ শেষের পরে, ইংরেজ সরকার নিজেদের রাজধানীতে কলকাতাতে এই যুদ্ধে নিহত সেনা ও সেনানায়কদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের করেন। ২৫০ বছরের পুরোনো এই ইতিহাস লোকচক্ষুর আড়ালে আজও নীরবে দাঁড়িয়ে ।
দেশ স্বাধীন হবার সময়ে বেশিরভাগ রোহিলাজাতির মানুষ ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যায়।  

কলকাতা।

If You would Like to Give any Feedback Or Suggestions,

 Then Please Feel Free to Email Me.

subhra2579@ gmail.com

ধন্যবাদ , 

k.subhro